ইলোরা জামান:: রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মানবিকতা শিখুন হে প্রগতিশীল উপদেশ ফলানো মানবিকতার ধ্বজাধরা বাংগালী!
মানবিক বাংলাদেশ, কান আরাম পায় শুনতে। বাধ্য হয়ে হোক অথবা অন্য কারণে হোক, আশ্রয় হয়েছে রোহিঙ্গা পরিচয়ের মানুষদের এদেশে।
এদিকে শাহবাগী, যারা ঐ মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতে চায়নি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদির দোহাই দিয়ে মানুষগুলোকে নিশ্চিত মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে উদগ্রীব ছিলো, তারাই এখন হাপুস হুপুস করে মানবিকতার ক্রেডিট নিচ্ছে নির্লজ্জের মত।
আমরা মানবিক আমরা মানবিক, অমুকে মানবিক না বলে তারস্বরে চিৎকার করছে তারাই বেশি। অথচ যতক্ষণ পর্যন্ত উনাদের নেত্রী বাধ্য না হয়েছেন আশ্রয় দিতে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের মনে ছিলোনা মানবিকতার কথা। তখন তারা তুমুল দেশপ্রেমিক ছিলো। তারা তখন বর্ডারে অতন্দ্র প্রহরী!
যাইহোক, বিশ্ব এখন এক মানবিক বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছে এই রোহিঙ্গাদের থ্রু তে। অথচ আমরা কি আসলেই ততটা মানবিক? আমাদের অমানবিকতার প্রমাণ প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতাতে। রাজন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকালও একজন কিশোরকে খুটিতে বেঁধে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। মৃত্যুর আগে পানি চেয়েও পানি পায়নি সে। এটি সাম্প্রতিক উদাহরণ। আরো অসংখ্য ঘটনা এইধরনের রয়েছে আমাদের।
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ মেরে খাওয়া, সবকিছু লুটে নিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দেয়া, নামমাত্র মূল্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা গয়না কিনে নেয়া, টাকা হাতিয়ে নেয়া, ওদের মেয়েদের ধর্ষণ করা ইত্যাদি ঘটে গিয়েছে এই মানবিক বাংলাদেশেই। সুযোগ পেলে আমরা যে কতটা বর্বর হয়ে উঠতে পারি তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার দরকার নেই।
রোহিঙ্গারা খারাপ, রোহিঙ্গারা অপরাধী, রোহিঙ্গাদের হ্যান করতে হবে, শিক্ষা নিতে হবে, জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি ধরণের স্ট্যাটাসে সয়লাব হয়ে আছে ফেইসবুক বেশ কিছুদিন ধরে। যেন আমরা অত্যন্ত প্রগতিশীল, যেন আমরা দুনিয়ার সবচাইতে শিক্ষিত, যেন আমরা সবচেয়ে মডার্ণ, যেন আমরা সভ্যতার চরম শিখরে উঠে গিয়েছি! এখন রোহিঙ্গাদের সভ্য বানিয়ে, শিক্ষিত বানিয়ে বহুত ভাব নিতে হবে। এই সভ্য হবার ভাব নেবার সুযোগ আর আসেনি জীবনে, আসবেওনা। সুতরাং যত সভ্যতা ভব্যতা আছে শেখাতে হবে এখনি
দুইদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শেখা বাঙালী যখন রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কুৎসিত কথা বলে এব্যাপারে তখন গ্রাম্য অশ্লীল প্রবাদ মনে পড়ে যায়। কিছু প্রগতিশীল ফেমিনিস্টরা যে কুৎসিত ভাষায় রোহিঙ্গা নারীদের অধিক সন্তান নেয়া নিয়ে সমালোচনা করেছে তা দেখে হয়ত পৃথিবীর বাকি সভ্য দেশগুলো হেসেছে। সভ্য মানুষেরা অন্যদের শেখায়। শেখাতে গেলে কি ধরণের ল্যাংগুয়েজ ইউজ করতে হয় তা আমাদের এই প্রগতী অসভ্য যারা নিজেদের সভ্য মনে করেন হাতাকাটা ব্লাউজ পরেই, তারা জানেন না। একটি সন্তান জন্মদান ও পালন করা কি পরিমাণ কষ্টের কাজ। সেখানে রোহিঙ্গা নারীরা চার পাঁচটি করে সন্তান নিচ্ছে কি কারণে, তারা জানবার চেষ্টা করেনা। রোহিঙ্গারা ভিক্টিম। এমনকি অশিক্ষারও ভিক্টিম। আমাদের সেইসব ফটকা সভ্যগুলোর মাথায় তা আসেনা। এরা ব্লেইম করে ভিক্টিমকে।
তাদেরকে বলতে ইচ্ছে করে সভ্য দেশের কাছ থেকে শিখুন। দেখুন তারা রেফিউজিদের সাথে কিরকম আচরণ করে। সবচেয়ে গোঁয়ার ক্ষ্যাত অশিক্ষিত রেফিউজীকেও তারা কখনো সরাসরি এভাবে বলবে না। যেখানে রোহিঙ্গারা পায়নি শিখবার সুযোগ, দেয়া হয়নি, পায়নি উন্নত ভাবনা ভাবার সুযোগ সেখানে তাদেরকে এসব বলা যে চরম মূর্খের কাজ তা আপনারা জানেন না। ভেবেছেন খুব উন্নত আপনি!
রোহিঙ্গাদের এই দিক যা আপনাদের চোখে পড়েনি তা চোখে তা হাইলাইট করেছে বিভিন্ন সভ্য দেশের মিডিয়া, ফটোগ্রাফার। শিখুন রোহিঙ্গাদের কাছ থেকেও। দেখুন তারা প্রাণভয়ে পালিয়ে আসবার সময় তাদের বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ফেলে আসেনি। যে বৃদ্ধ পিতা কিংবা মাতা হয়ত মাত্র আর কয়েকটি দিন বাঁচবে সেই বৃদ্ধ পিতা মাতাকেও রোহিঙ্গা সন্তান কাঁধে করে নিয়ে হেঁটেছে মাইলের পর মাইল। অথচ সেদিনও পত্রিকায় দেখলাম মানবিক বাংলাদেশের পুত্র কন্যারা গোয়াল ঘরে রেখেছে মা’কে, দেখলাম পাঁচ সন্তান ভালো অবস্থাতে থাকার পরেও মাকে ভিক্ষে করে খেতে হচ্ছে। শিখুন মানবিকতা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে। এরপর বাধ্য হয়ে দেখানো মানবিকতা নিয়ে ফুটানি করেন।
লেখিকাঃ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গবেষক ও কলামিস্ট