সরকারী খরচে প্রবাসীর লাশ দেশে পাঠানোর দাবী ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়

 

শামসুল ইসলাম-coffin

 

ধারনা করা হয় প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে রেমিটেন্স পাঠান তা বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎস। অবশ্য সব সরকারই প্রবাসীদের এ অবদান স্বীকার করেন এবং তাদের নানা সুজুগ সুবিধা প্রধানের গালভরা প্রতিশ্রুতি দেন কিন্ত তা বাস্তবায়িত হয় থুড়াই। তবে আর সব দাবী দাওয়া ছাপিয়ে এবার প্রবাসীদের মধ্য থেকে একটি সুনির্দিষ্ট দাবী উঠেছে, মৃত প্রবাসীর লাশ যেন অন্তত সরকারী খরচে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্তা করা হয়। ফ্রান্স প্রবাসীদের থেকে উঠা এই ক্ষীণ আওয়াজ ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে। প্রেক্ষাপট-প্রবাসীদের মধ্যে কেউ যখন দুঃখ জনক ভাবে মৃত্যু বরণ করেন, অনেক ক্ষেত্রে তার লাশ দেশে পরিজনের কাছে ফেরত পাঠাতে হয় স্তানিয়ভাবে চাঁদা তুলে। দোকানে দোকানে গিয়ে বা পরিচিত জনের কাছে ধরনা দিয়ে প্রিয় মাতৃভুমে পাঠাতে হয় একজন রেমিটেন্স সৈনিকের লাশ। এটি জীবিত প্রবাসীদের কাছে তার মৃত সহকর্মীর প্রতি এক ধরণের অপমান হিসাবে মনে হয়। পরিবার ও দেশের জন্য নিরন্তর যুদ্ধ করে যাওয়া একজন প্রবাসীর বিদায় বেলায় এমন অসম্মান মেনে নেয়া যায় না বা মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসীরা। আর এ প্রেক্ষাপটেই সরকারী খরচে প্রবাসীর লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবী সামনে আসে। যেভাবে গণদাবীতে পরিণত হল-সম্প্রতি ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কেউ কেউ নানা কারনে মৃত্যু বরন করলে তাদের মরদেহ দেশে ফেরত পাঠাতে স্তানিয়ভাবে চাঁদা তুলার ব্যবস্তা করতে হয়। এটি অনেকের কাছেই মৃত সহকর্মীর প্রতি এক ধরনের অপমান বা অসম্মান বলে মনে হয়। সর্বপ্রথম ‘প্যারিস বাংলা প্রেস ক্লাব’ থেকে দাবী উঠে এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার। এর পর পরই “ইয়ং বাংলাদেশ,ফ্রান্স” নামের একটি সংগঠন এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে, দাবী আদায়ে গণ সাক্ষর কর্মসূচী ঘোষণা করে। এতে প্রথম দিনেই অভূত পূর্ব সাড়া পড়ে। দাবিটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভার্চুয়াল জগতে। এখন আর এ দাবী ফ্রান্সের প্রবাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ থেকে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকাসহ নানা দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে। ইতিমধ্যে কুয়েত, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশে গণ সাক্ষর কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন প্রবাসীরা। সকলেই দাবী করছেন সরকার যেন এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। তবে জানা যায় এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্ম সংস্তান মন্ত্রণালয়ের একটি নীতি মালা আছে। বাংলাদেশ থেকে যে সকল প্রবাসী, শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন দেশে যান তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবি’লে জমা দিয়ে থাকেন। প্রবাসীদের লাশ দেশে আনা প্রসঙ্গে এ মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের ‘মৃত দেহ দেশে আনয়ন’ অংশে বলা আছে; “প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশি কর্মীর লাশ তার পরিবারের মতামত সাপেক্ষে দেশে আনা হয়। যদি কোন মৃতের পরিবার লাশ সংশ্লিষ্ট দেশে দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেদেশে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মৃতের লাশ দেশে প্রেরণে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে এবং মৃতের পরিবার লাশ দেশে আনয়নের খরচ বহনে অক্ষম হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের অর্থায়নে লাশ দেশে আনা হয়। কিভাবে দাবী আদায় হবে-প্রবাসীদের এই দাবী ধীরে ধীরে সার্বজনীন রূপ নিলেও কি প্রকৃয়ার এ দাবী সরকারের কর্ণ কুহোরে পৌঁছানো হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। আমরা এমন করতে পারি, ধরেন, কেবল আলোচিত দাবীকে সামনে রেখে দলমতের উরধে উঠে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তুলা যায়, যার কাজ হবে সকল কর্মসূচী সমন্বয় করা বা প্রতিনিধিত্ব করা। একই নামে গোটা বিশ্বে এ প্লাটফর্মকে ছড়িয়ে দিয়ে সম্ভব হলে একই দিনে দাবী বাস্তবায়নে নানা কর্মসূচী পালন করা যেতে পারে। সরকারের কাছে দাবী পৌঁছানোর প্রাথমিক মাধ্যম হতে পারে সকল দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। এক যোগে একই দিনে অনেকে দেশের বাংলাদেশের দুতাবাসে একই দাবী তুলে দিতে পারলে অবশ্যই তা বাংলাদেশে একটি বড় সংবাদ হতে বাধ্য। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্ম সংস্তান মন্ত্রণালয় এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সংগে বৈঠকে বসতে হবে। সদা সতর্ক থাকতে হবে আন্দোলন যাতে ব্যক্তি বিশেষের বিশেষ কোন স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম না হয়ে যায়। এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে ফ্রান্সসহ ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী যারা শ্রমিক হিসাবে বিদেশে আসেননি তাদের ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ের সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা যেমন পাওয়া যায় না তেমনি এ ব্যাপারে বিশেষ কোন তথ্যও পাওয়া যায় না। তবে সরকার চাইলে এবং স্বদিচ্ছা দেখালে যে কোন ভাবেই প্রবাসীদের এ দাবী, যা গণ দাবীতে রূপ নিয়েছে তা পূরণের উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করেন প্রবাসীরা। এটা যেমন একটি মানবিক দাবী তেমনি একজন প্রবাসীকে শেষ বেলায় সম্মান দেখানোর সরকারের পক্ষ থেকে একটি সুজুগও বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.