[author image=”https://scontent-sin6-1.xx.fbcdn.net/v/t1.0-9/1044085_10201557862814443_344135493_n.jpg?oh=a11f84e8388024ef040fa527284842df&oe=58BE5C76″ ]এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান[/author]
এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানঃ
পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান বিখ্যাত নগর পরিকল্পনাবিদ রবার্ট ম্যাকফারলেনকে দিয়ে ঢাকার মাস্টারপ্ল্যান করিয়েছিলেন। বৃটিশ আমলে ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টকে সাপোর্ট দেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত খামারকে তিনি সাভারে সরিয়ে সেখানে সেকেন্ড ক্যাপিটাল করার পরিকল্পনা করলেন। আর সেকেন্ড ক্যাপিটালের কেন্দ্রে ন্যাশনাল এসেম্বলি কমপ্লেক্স ডিজাইন করার দায়িত্ব পেলেন লুই কান। পুরো এসেম্বলি কমপ্লেক্স এমন ভাবে ডিজাইন করতে বললেন, যেন আকাশ থেকে দেখলে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার মত দেখতে লাগে। সেই অনুযায়ী খামারের বিশাল সবুজ প্রান্তরকে পার্ক বানিয়ে পাকিস্তান পতাকার সবুজ জমিন রাখার পরিকল্পনা করা হলো, সেটি এখনকার চদ্রিমা উদ্যান। তার পেছনের জায়গাটা পাকিস্তানের পতাকার সাদা অংশ হিসেবে সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, যেখানে এখন চীন-মৈত্রী / বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র এবং বানিজ্য মেলার জন্য নির্ধারিত স্থান। পতাকার চাঁদ হিসেবে তৈরী করার কথা ছিল একটি চন্দ্রাকৃতির লেক, সেটি এখনকার ক্রিসেন্ট লেক। আর চাঁদের সাথে তারা হিসেবে থাকার কথা ছিল জাতীয় সংসদ ভবন। বিভিন্ন কারণে শুরু থেকেই লুই কানের নকশা সেই মোতাবেক ঠিক থাকেনি। লেকের আকার বদল হয়েছে, বিস্তৃতিও বদল হয়েছে সেই আমলেই।
পরবর্তীতে সংসদ ভবন এলাকায় সেই সবুজ পটভূমি সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি। গণভবনের বিস্তৃতি চন্দ্রিমা উদ্যানের জায়গা দখল করেছে, চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর দেয়ার কারণে এবং সেখানে রাস্তা তৈরীর ফলে সবুজ জমিনটি এখন আর পাকিস্তানের পতাকার সবুজ আয়তক্ষেত্র মনে হয় না। সাদা রঙের সচিবালয় ভবন না তৈরী করে সেখানে বানিজ্য মেলার স্থান এবং সম্মেলন কেন্দ্র তৈরীর ফলে ঐ অংশটিও এখন আর সাদা মনে হয় না। ডেপুটি স্পিকারদের বাড়ী তৈরীর কারণে সংসদ ভবনটিও এখন আর আকাশ থেকে দেখলে তারার মত মনে হয় না। আরো অনেক পরিবর্তন বিস্তারিত আলোচনা করলাম না।
এই পরিবর্তনগুলো আমার কাছে খুবই ভাল মনে হয়েছে। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশের আকাশ থেকে এই ভূমিতে একটি পাকিস্তানের পতাকা দেখা যাবে এটি কোনভাবেই আমার কাছে গ্রহনযোগ্য না।
সরকার অনেক খরচপাতি এবং পরিশ্রম করে লুই কানের মূল নকশাটি এনেছে। জাতীয় সংসদ ভবনের কমপ্লেক্স নাকি তারা লুই কানের মূল নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবে। আশা করি উনারা লুই কানের মূল নকশাটি জনসাধারণের দেখার জন্য উম্মুক্ত করবেন। যাতে করে জনগণ বুঝতে পারে, কিভাবে স্বাধীনতা লাভের ৪৫ বছর পর বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় পাকিস্তানী পতাকা তৈরীর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
আপডেট!
তিনি বললেন, সংসদ ভবনে বেড়া দেয়ায় মূল নকশার কোন ক্ষতি হয়নি। আরো বললেন, “লেকটা হচ্ছে এটা অর্ধচন্দ্র, আর এটা (সংসদ ভবন) হচ্ছে একটা স্টারের মত করে করা”। তারপর আর চাঁদ তারার পেছনে সবুজ উদ্যানের কথা না বলে বললেন, “কাজেই
এই নকশার অনেক রকম তাৎপর্য আছে”। উনি অবশ্য এটাও বলেছেন, “যেটি এই নকশার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করলো, সেটির কথা কেউ বলছে না”। মানে, সবুজ উদ্যানে জিয়ার সমাধিটা পাকিস্তানের পতাকার সবুজ জমিনের নকশাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, এটি নিয়ে উনার অনেক আক্ষেপ!
গতকাল লিখেছিলাম, লুই আই কানের মূল নকশা ছিল পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার আদলে তৈরী। তাৎপর্যটা আসলে সেখানেই। আর বাংলাদেশের বুকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাকিস্তানের পতাকা ফুটিয়ে তোলাটাই হচ্ছে সেই তাৎপর্যের বাস্তবায়ন।