শাফকাত রাব্বি আনিক::
একাত্তর সালের রিফ্যুজি বা শরনণার্থী নিয়ে কিছু বলছিনা, কেননা ঐ সালটা অনেক আবেগে ঢাকা।
তবে বলছিলাম ২০১৫ আর ২০১৬ এর কথা। ইউরোপে যখন মিলিয়ন মিলিওন রিফ্যুজি প্রবেশ করছে, খবরে প্রকাশ পেল এদের মধ্যে হাজারে হাজার নাকি বাংলাদেশি রেফুজি। বিশ্ব মিডিয়াতে রিপোর্ট এলো কোন যুদ্ধ ছাড়া এই পিসফুল দেশ থেকে এতো এতো রেফুজি কেন?
বলছিলাম ১৯৮০-১৯৯০ সালের কথা। হাজার হাজার বাংলাদেশি তখন রেফুজি হয়েছে আমেরিকায়, ইউরোপে। তারা বলেছে দেশে স্বৈরশাসন, ফিরে গেলেই মেরে ফেলবে জেনারেল এরশাদ। আমেরিকানরা জিজ্ঞেস করতো “তুমি কে? কেন মারবে?”।
তখন অনেক বাংলাদেশী টাকা পাঠিয়ে দেশ থেকে ভুয়া দৈনিক ইত্তেফাক ছাপাতো নিউজপ্রিন্টে। সেখানে নিউজ এ দেখানো হতো বীর বাংগালি রেফুজি এপ্লিকেশন যিনি করেছেন তিনি নেতা হিসাবে মাঠে ঘাটে এরশাদ বিরোধী বক্তৃতা দিচ্ছেন। সেটার সত্যায়িত, নোটারি পাব্লিক করা ডকুমেন্ট পাঠানো হতো দেশ থেকে।
এই রকম এপ্লিকেশন শুরুর দিকে হাজারে হাজার এপ্রুভ হয়েছে। বাংলাদেশি সাফল্যের সাথে হয়েছে আমেরিকান বা ইউরোপিয়ান রেফুজি।
এক পর্যায়ে ব্যাপার এমন হয়েছে যে আমেরিকান ইমিগ্রেশন হাসতে হাসতে বলেছে,” তোমার দেশে তো দেখি সবাই নেতা, কর্মী কই?”
বলছিলাম ২০১৩ সালের চেতনাযুদ্ধের কথা। এই যুদ্ধের সেকটর কমান্ডাররা অনেকেই এখন ইউরোপে রেফুজি। তাদের চেতনা কায়েম হয়েছে, পছন্দের সরকার চিরস্থায়ী হয়েছে, কিন্তু তারপরেও তারাই হলেন ইউরোপে রেফুজি।
মজার কথা এদের কেউ কেউ এখন আবার রহিংগা রেফুজির বিরুদ্ধেও বিশাল চেতনাধারী।
আবারো বলছি, ১৯৭১ সাল এই লেখার আওয়তাধীন নয়। তবে ৭১ পরবর্তী বাংগালির রেফুজি বিশয়ক কান্ডজ্ঞান দেখে এটা বোঝা যাচ্ছে, এদের কাছে রেফুজি ব্যাপারটা দুই-নম্বরী করে একটা চাকরী বাগিয়ে নেবার মতো, হাসতে হাসতে দাওয়াত খেতে খেতে গল্প করে বলার মতো একটা ব্যাপার।
একারণে এই একই বাংগালি যখন বলে নির্যাতিত রোহিংগা রেফুজিদের দেশে ঢুকতে দেয়া যাবে না, তখন আসলে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকে না।
জাতির এই বড় প্রতারক অংশটি, যারা যুগ যুগ ধরে বানোয়াট নির্যাতন, নিপীড়নের গল্প ফেঁদে রেফুজি হতে অভ্যস্থ, সে অন্যকেও ঠিক একই ভাবে দেখবে, এটাই স্বাভাবিক।