নবকণ্ঠ ডেস্ক: প্যারিসের ১৮তম অঞ্চলে গত রবিবার অনুষ্ঠিত হলো সংহতি ও নাগরিক দায়বদ্ধতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সলিডারিতে আজি ফ্রান্স (SAF) কর্তৃক আয়োজিত পঞ্চম পরিচ্ছন্নতা দিবসে দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন। বাংলাদেশি ও আফ্রিকানসহ বিভিন্ন প্রবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য, SAF-এর স্বেচ্ছাসেবক এবং Collectif de Sans-Papiers de Paris 75 (CSP75)-এর কর্মীরা একসাথে রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার করেন।
দিনের শুরুতে SAF সভাপতি নয়ন খিয়াং উদ্বোধনী বক্তব্যে সমাজে অভিবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্যারিস ১৮তম অঞ্চলের কাউন্সিলর ও CSP75-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত আনজুমান সিসোকো এবং প্যারিস কাউন্সিলর ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক মেয়রের প্রতিনিধি ফ্রেদেরিক বাদিনা-সেরপেত্তে। CSP75-এর সক্রিয় সদস্য জোয়েল যৌথ উদ্যোগটির প্রশংসা করেন।
গ্লাভস ও বর্জ্য ব্যাগ হাতে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা কয়েক ঘণ্টা জুড়ে এলাকাজুড়ে পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নেন। ডজন ডজন ব্যাগ ভর্তি আবর্জনা দেখে পথচারীরা বিস্মিত ও আনন্দিত হয়ে তাদের প্রশংসা করেন। অনেকেই সরাসরি স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে কৃতজ্ঞতা জানান। একজন বাসিন্দা বলেন, “এটা আমি প্রথমবার দেখছি, দারুণ কাজ!”
নয়ন খিয়াং বলেন, “আমরা আমাদের দেশ ছেড়ে এসেছি, কিন্তু এখন ফ্রান্সই আমাদের দেশ। এখানকার নাগরিক জীবনে দায়িত্ব পালন করা আমাদের কর্তব্য। অভিবাসীরা সমাজের বোঝা নয়, বরং এক সম্পদ ও ইতিবাচক শক্তি।”
আনজুমান সিসোকো মন্তব্য করেন, “আমাদের নিয়ে প্রায়শই নেতিবাচক আলোচনা হয়। আজ আমরা দেখিয়েছি, অভিবাসীরাও অংশ নেয়, সম্মান করে এবং সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে চায়।”
অন্যদিকে ফ্রেদেরিক বাদিনা-সেরপেত্তে স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমাজে অনুপ্রেরণা জোগায়। CSP75-এর সদস্য জোয়েল স্মরণ করিয়ে দেন, “অভিবাসীরা শুধু দাবি করেন না, বরং সাধারণ কল্যাণের সক্রিয় অংশীদার।”
SAF সভাপতি নয়ন খিয়াং বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মামুন, শাহিন, তাসনিয়া, তাওহিদা, সবুজ, শিমুল, খালেদসহ সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী এবং CSP75-এর সহযোগিতার জন্য। তার মতে, পরিচ্ছন্নতা দিবস কেবল পরিবেশ সচেতনতা নয়, বরং অভিবাসীদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তির শক্তিশালী প্রতীক।
অভিবাসন নিয়ে যেখানে প্রায়শই নেতিবাচক আলোচনা প্রাধান্য পায়, সেখানে এই উদ্যোগ একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে—অভিবাসীরা দর্শক নয়, বরং সাধারণ কল্যাণের সক্রিয় অংশীদার। পঞ্চম সংস্করণটি আবারও প্রমাণ করেছে, সংহতি, অন্তর্ভুক্তি ও পরিবেশ সুরক্ষা একসাথে এগিয়ে যেতে পারে।
SAF ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। লক্ষ্য, এলাকার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক কর্মকাণ্ডে অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তিকে আরও জোরদার করা। সহজ কিন্তু প্রতীকী এই কর্মসূচি আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে: অভিবাসীরা সমাজের প্রান্তিক নন, বরং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং উন্নয়নের সহযোগী।
নিউজের ©সর্বস্বত্ব নবকণ্ঠ কর্তৃক সংরক্ষিত। সম্পূর্ণ বা আংশিক কপি করা বেআইনী , নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।