ইলোরা জামান, (অস্ট্রেলিয়া থেকে):
পড়াশোনার সুবাদে সার্ভে করতে গিয়ে একবার কিছু পতিতা কিংবা সোজা বাংলায় ‘বেশ্যা’ বলে যাদের, তাদের সাথে কথা বলবার সুযোগ হয়েছিলো। ঘটনাচক্রে তাদের একজনকে বলেছিলাম, “সবচেয়ে ঘৃণ্য যে কাজ, সেই ঘৃণা বুকে চেপে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত একই কাজ করে যাওয়ার মত কষ্টকর বুঝি আর কিছুই নেই। আমি সমব্যথী”। সে বলেছিলো, “তুমি ভূল, ইলোরা। আমার কাজ আমার কাছে ঘৃণ্য নয়। কষ্ট নয়। সবচেয়ে কষ্টকর সেই সময়টি যখন আমার কাস্টমার যে প্রতিদিন আমার কাছে এসে আনন্দগ্রহণ করে, সে যদি আমাকে বেশ্যা বলে গালি দেয়। এর চাইতে ভয়ংকর বেদনার আর কিছুই নেই”।
পরে ভেবেছি পৃথিবীর কত মেয়েকেই তো প্রস্টিটিউট না হয়েও এই শব্দ হজম করতে হয় অন্যের কাছ থেকে। যারা বলে তারা রাগের প্রশমন করে, তৃপ্তি পায় একধরণের। একধরণের মানসিক পীড়া দিয়ে নিজ রাগের প্রশমন করতে গিয়ে অনেকে কাছের মানুষকেও ছাড়েনা। যদিও সে জানে তার স্ত্রী ওরকম নয়। নিজ কানে শুনেছি স্বামী তার স্ত্রীকে এরকম বলছেন কিছুতে কিছু হলেই। সরে এসেছি ওখান থেকে না শুনবার ভাণ করে। তখনই ভেবেছি এসব বিষয় সামনে আনা জরুরী।
নারীর প্রতি পুরুষের কিংবা নারীর প্রতি নারীর যে ভাষাভিত্তিক সহিংসতা তা নিয়ে সেই বহুকাল আগে থেকে ভাবছি। আমরা অনেক কিছু ওভারলুক করে যাই, মেনে নেই ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজের সাথে কিছু ঘটে যায় সংশ্লিষ্ট কিছু। আমাদের সমাজে নারীদের সাথে প্রচুর অবহেলা, অবমাননা এবং ডিস্ক্রিমিনেশন ও ভায়োলেন্স ঘটে। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, সামাজিক ভায়োলেন্স ইত্যাদিস্থানীয়। নারীরা যেহেতু লিখালিখিতে কম এগিয়ে এই সমাজে কিংবা প্রকাশের ক্ষেত্রে লাজুক অথবা পারদর্শী নয় ততটা সেহেতু অনেক বিষয় আছে যা সামনে আসেনা। হয়ত সাহসের অভাব কিংবা আরেকবার সহিংসতার ভয়ে।
বেশ্যা শব্দটি এসেছে বৈশ্য শব্দ থেকে। বর্ণপ্রথার কালে হিন্দু ব্যবসায়ী শ্রেণীকে বলা হতো বৈশ্য। সেখান থেকে বিকোনো অর্থে এসেছে বাংলা বেশ্যা শব্দটি। কালের পরিক্রমায় শব্দটির একক-একমুখী অর্থ নির্মিত হয়েছে। শরীর বিক্রি করা মেয়েদের উপাধি হয়েছে বেশ্যা। আর এখন শুধু শরীর বিকোলেই না, স্বামীর সাথে তর্ক কিংবা একটু এদিক সেদিক করলে, কিংবা পরিচিত অপরিচিত অনেকের সাথে অমত করলেও
বেশ্যা বলার চল আছে। বেশ্যা একটি স্ত্রীবাচক শব্দ এবং এর কোনো পুরুষবাচক সমার্থক শব্দ নেই। তারমানে কি এই যে, শরীরী শুদ্ধতা শুধুমাত্র নারীদের বিষয়? পুরুষের শরীর শুদ্ধ হতে হয় না? পুরুষের শরীর বিক্রয়যোগ্য কোনো পণ্য হতে পারে না? নারীর ক্ষেত্রে কেন এর একক অবস্থান? আবার নারীকেই এর ভিক্টিম হতে হয়। আমরা কতটা অসভ্য যে কিছু বিশ্রী স্ত্রী-বাচক শব্দকে এখনও লালন করছি, যেগুলোর কোনো পুরুষ-বাচক শব্দ নেই। যেমনঃ গণিকা, বেশ্যা, রক্ষিতা, পতিতা ইত্যাদি। এইসব শব্দের পুরুষ-বাচক শব্দ আবিস্কার করতে হবে নতুবা সেগুলোকে শব্দ-ভান্ডার থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ, এসব শব্দের দ্বারা প্রতিনিয়ত মেয়েরা মানসিক ধর্ষন এবং ভায়োলেন্স এর স্বীকার হচ্ছে। যা ভিক্টিম ঠিক অনুরুপে ফিরিয়ে দিতে পারেনা। তখন সে প্রচন্ড ফ্রাস্টেইটেড থাকে। দেখা গিয়েছে যে, যে নারী অন্য নারীর বিপরীতে এই শব্দ ব্যবহার করে সেই নারী জীবনে বহুবার তার স্বামী কিংবা অন্যের কাছ থেকে এই শব্দ দ্বারা আঘাতপ্রাপ্তা। সে শিখেছে এবং নিজ প্রজাতির প্রতি প্রয়োগ করছে। এই শব্দের অনুপযুক্ত ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ থাকা জরুরী।
বিঃদ্রঃ আমি নারীবাদি নই। স্রেফ মানুষবাদী। অনেকের কাছে এরমত জঘন্য লেখা আর হয়না বলে মনে হবে। কিন্তু হু কেয়ারস? নিজের মস্তিষ্ক অন্যের কাছে বর্গা দিয়ে গনি মিয়া টাইপের লেখক হতে চাইনা।
বেশ্যা শব্দটি শুধু নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়।এটা নারীদের সাথে চরম বৈষম্য।একটা নারীকে পুরুষরাই বেশ্যা বানায়।তাহলে বেশ্যা বলতে শুধু নারীকে কেন বোঝানো হয়, বেশ্যা শব্দটি পুরুষবাচক না হলে এটা স্ত্রীবাচক ও হতে পারে না।নারী পুরুষ উভয় এই শব্দ দ্বারা সংগঠিত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। যদি হতেই হয়,তাহলে বেশ্যা নারী বা বেশ্যা পুরুষ হওয়া দরকার।কেন শুধু নারীদের আগে এই শব্দের ট্যাগ লাগানো হয়।বর্তমানে শুধু নারী নয়,ছেলেরাও দেহব্যাবসায়ী হয়।
বেশ্যার সাধারন ব্যখ্যা মনে হয় বহুগামী যিনি। এই বহুগামী তো পুরুষ ও আছে। পুরুষ বহুগামী না হলে একা নারী বহুগামী হতে পারে না। পুরুষই তাকে বহুগামী করেছে। কিন্তু এই পুরুষ শাসিত সমাজে সব সময়ই মেয়েদের সব দোষ। পুরুষের বেলায় বোবা হয়ে থাকে। কিন্ত শুধু শরিরী বিষয় ছাড়াও বহু পথে, রূপে যিনি গমন করেন তাকেও তো ঐ একই রকম শব্দে বিশেষায়িত করা উচিৎ। যেমন ধরুন কোন এক নেতা রাজনীতি করছে এক দলের হয়ে। কিন্তু কোন এক সময়ে তিনি তার ব্যাক্তিগত স্বর্থের জন্য অন্য দলে যোগ দিলেন। এভাবে তিনি অনেক দল পরিবর্তন করলে তাকেও তো বহুগামী বলা যায়। চরিত্রহীন। আমি তাকে রাজনৈতিক বেশ্যা বলাতে চাই।
তবে আপনি যে সমর্থক পু-লিঙ্গ বাচক শব্দ বলার অবেদন করেছেন, তা আসলেই জানা নেই।
আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের এ নিয়ে কবিতার অংশঃ
সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে
পাপের হয়েছে শেষ
বেশ্যার লাশ হবে না দাফন
এইটা সাধুর দেশ
জীবিত বেশ্যা ভোগে তো আচ্ছা মরিলেই যত দোস?
দাফন কাফন হবে না এখন
সবে করে ফোস ফোস
বেশ্যা তো ছিল খাস মাল, তোদের রাতের রানী
দিনের বেলায় ভুরু কোচ কাও?
মরিলে দেওনা পানি!
সাধু সুনামের ভেক ধরিয়া দেখালি দারুন খেলা
মুখোশ তোদের খুলবে অচিরে
আসবে তোদের বেলা।
রাতের আধারে বেশ্যার ঘর স্বর্গ তোদের কাছে
দিনের আলোতে চিননা তাহারে?
তাকাও নাকো লাজে!
চিনি চিনি ভাই সব সাধু রেই হরেক রকম সাজ
সুযোগ পেলেই দরবেশী ছেরে দেখাও উদ্দাম নাচ!
nc. & appropriate expression . I totally agree with you .
Ossadharon akta lekha porlam … Tobe monke tripti dite partam jodi purusbachok sobdo tikeko motamoti toiri kora jeto…
Fb te akti post dekhe ami sarch kora suru kori j Prostitute bola hoe jara deho bebsa kore kintu jara deho take kine annondo vog kore tader ki bola hoe? Amar kache er uttor nei ..karo jana thakle aktu janaben
ভাই আমার অ জানা নেই কি করবো বলতো ।